বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯

পদ্য - ৩৮

জ্ঞানী কখনো ক্ষমতার পেছনে ছুটে না;
এজন্যই সে প্রকৃত ক্ষমতাবান।
সাধারণ মানুষ ক্ষমতার জন্য ব্যাকুল
এজন্যই তারা তা পায় না।

জ্ঞানী কিছুই করে না,
আবার কিছু অসম্পূর্ণও রাখে না।
সাধারণ মানুষ সব সময়ই কিছু না কিছু করে,
আর অধিকাংশ কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যায়।

এক ধরণের মানুষ আছে যারা দয়ালু, তারা কিছু কাজ করে
আর কিছু অসম্পূর্ণ রেখে যায়
আর এক ধরনের মানুষ, বলা যায় শুধুই মানুষ, এরা সামান্য কাজই করে
বাকি সব রেখে যায় অসম্পূর্ণ।
আর এক দল মানুষ, নৈতিক মানুষ, তারা কিছু কাজ করে
যখন কেউ এতে সাড়া দেয় না
তখন তারা গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামে।

যখন মহান পথ হারিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় ধর্ম
যখন ধর্ম বিলীন হয়, সৃষ্টি হয় নৈতিকতা
যখন নৈতিকতা শেষ হয়ে যায়, মানুষ মেতে উঠে ধর্মীয় উৎসবে
ধর্মীয় উৎসব হল প্রকৃত বিশ্বাসের আবর্জনা,
এ থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।

জ্ঞানী নিজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে
বাহ্যিক নয়, আত্মিক,
কথার নয়, কাজের ।
তার নিজের জন্য কোন ইচ্ছা নেই
সে বাস্তবতায় বাস করে,
সকল বিভ্রান্তি থেকে দূরে।


০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯



 সারমর্ম: (অনুবাদক যেমন বুঝেছেন)
যারা লোভহীন, আত্মত্যাগী, নিজের মত সকলকে ভালোবাসে, তাকেই সবাই শ্রদ্ধা করে আর ভালোবাসে, সেই প্রকৃত ক্ষমতাবান, সে যা করতে চায় তাই করে, তার মন শান্ত এবং স্থির, কোন কাজে হাত দিয়ে মাঝপথে থেমে যায় না। সবার জন্য এই পথ, মহান পথ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই পথের বিস্তৃতি, সবার জন্য আদর্শ পথ, এই পথ অনুসরণে মিলে প্রশান্তি, মানুষ যখন এই পথ থেকে দূরে সরে যায় তখন তারা ধর্ম তৈরী করে সেখানে শান্তির খোঁজ করে, আর যখন কালের বিবর্তনে ধর্মও বিলীন হবার পথে তখন মানুষ নিজের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নৈতিকতা তৈরী করে সেই পথে চলে, আর যখন সমাজে নৈতিকতাও থাকেনা, তখন মানুষ বিভিন্ন ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আনন্দের উপকরণ খুঁজে, ধর্মের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ধর্মের নামে উৎসব. অনুষ্ঠান, যার সাথে ধর্মের সম্পর্ক অনেক কম, তখন মানুষের মাঝে আরো বিভেদ সৃষ্টি হয়, একেক দল একেক রকম মতবাদ দেয়, আর এ থেকেই সমাজে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা।

পদ্য - ৩৭

মহান পথ কখনো কিছু করে না,
কিন্তু এ পথ সকল কিছুর ভিত্তি।

যদি ক্ষমতাবান শাসক এ পথে নিজেদের পরিচালিত করে,
সমস্ত দুনিয়াই জেগে উঠবে নতুন রূপে।
সাধারণ মানুষ প্রত্যহ জীবনে খুঁজে পাবে প্রশান্তি,
ছন্দময় জীবনে থাকবেনা অশুভ আকাঙ্খা।

যেখানে অশুভ আকাঙ্খা নেই
সেখানে বিরাজ করে প্রশান্তি।


০৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৬

পদ্য - ৩৬

যদি সঙ্কুচিত করতে চাও,
আগে প্রসারিত হতে দাও।
যদি  দূরে সরাতে চাও,
তবে তা কাছে আসতে দাও।
যদি কিছু পেতে চাও,
প্রথমে কিছু দিয়ে দাও।
একে বলা হয় তাল মিলিয়ে চলা,
সব এক নিয়মে প্রবাহিত।

কোমলতাই কঠোরতা কে জয় করতে পারে
ধীরস্থিরতা জয় করে অস্থিরতা।
তুমি কিভাবে কাজ করছো তা বলে বেড়ানোর কী দরকার?
মানুষ শুধু ফল দেখতে চায়, তাই দেখাও।


০৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:১৪

পদ্য - ৩৫

যে এই মহান পথে প্রবেশ করে,
তার মন যে কোন স্থানে যেতে পারে।
সে বুঝতে পারে মহাবিশ্বের স্পন্দন,
অনেক যন্ত্রণার মাঝেও সে থাকে সুস্থির,
কারণ তার হৃদয় অনুভব করে এর প্রশান্তি।

সুরের মোহনা বা খাবারের সুঘ্রাণ মানুষকে থামায়
সকল কাজ ফেলে মেতে উঠে উপভোগে।
কিন্তু এ পথ একঘেয়ে, ঘ্রাণ-হীন।
যখন দেখার চেষ্টা করবে, দেখবে শূন্যতা।
যখন শোনার চেষ্টা করবে, পাবে শুধু নিস্তব্ধতা।
যখন ব্যবহার করবে, বুঝবে এর চেয়ে ভালো আর কিছু নেই।


০৬ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৪৮

পদ্য - ৩৪

মহান পথের প্রবাহ সর্বত্র
সবকিছু কে এনে দেয় পূর্ণতা
সকল কিছুর অস্তিত্বের মূলে এই পথ,
অনন্ত, অসীম।

এটা বিশেষ কিছুকে প্রাধান্য দেয় না, এর কাছে সবই সমান
সবার অলক্ষ্যে পূরণ করে যায় চাহিদা
সকলকে পালন করে এবং রক্ষা করে কিন্তু প্রভুত্ব করে না
তাই এটিকে বলা হয় "সর্বশ্রেষ্ঠ"
জ্ঞানীও এমন-
সে কখনো তার মহত্বের প্রচার করে না
এমনকী এটা নিয়ে ভাবেও না
এর চেয়ে মহান আর কী হতে পারে?


০৬ নভেম্বর ২০১৮ ১২:২৬

পদ্য - ৩৩

যে অন্যদের বুঝতে পারে সে বুদ্ধিমান;
যে নিজেকে বুঝতে পারে সে প্রজ্ঞাবান।
যে অন্যের বিরুদ্ধে জয়ী হয় সে শক্তিমান;
আর যে নিজের বিরুদ্ধে জিতে সেই প্রকৃত ক্ষমতাবান।

যদি বুঝতে পারো তোমার সবই আছে
তবেই তুমি প্রকৃত সমৃদ্ধ।
যে নিজের মত বাঁচে, হয়তো সে পায় দীর্ঘজীবন;
আর যে এই মহান পথের পথিক, সে লাভ করে অনন্ত মহাজীবন।


০৫ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০৭

পদ্য - ৩২

মহান পথের সীমানা বুঝে ফেলা যায় না।
অতি ক্ষুদ্র,
তবু ধারণ করে অগুনিত ছায়াপথ।

যদি ক্ষমতাবান ব্যাক্তি এই মহান পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারে,
তার নেতৃত্বে থাকবে সাম্যতা,
পৃথিবী হবে স্বর্গীয়।
সকল মানুষ খুঁজে পাবে প্রশান্তি,
আর সকল আইন ধারণ করবে তাদের হৃদয়।

যখন তোমার অস্তিত্ব রয়েছে,
তুমি জানো এটা চিরস্থায়ী নয়।
যখন তোমার যাত্রা শুরু হয়েছে,
তুমি জানো একসময় থামতে হবে।
তবে যদি জানতে পারো কখন থামবে,
এড়াতে পারবে আসন্ন ভয়।

সকল কিছুর গন্তব্য এই পথ,
যেমন নদী মিশে যায় সমুদ্রে।


০৪ নভেম্বর ২০১৮ ২২:২১

পদ্য - ৩১

অস্ত্র ধ্বংসের যন্ত্র।
সকল সভ্য মানুষের কাছে এ যেন ঘৃণিত মন্ত্র।

অস্ত্র ভয় ছড়ায়।
সুশাসক এটা এড়িয়ে চলে যদিনা প্রয়োগ না করলেই নয়।
তখন নেহায়তই অস্ত্র প্রয়োগে বাধ্য হয়,
তবে অবলম্বন করে ভীষণ সতর্কতা,
শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকেই থাকে সর্বোচ্চ নজর।
যদি অশান্তি লেগেই থাকে, তা কি মেনে নেওয়া যায়?
শত্রুরা শয়তান নয়, মানুষ তারা,
তার মতই একই রক্ত-মাংসে গড়া।
সে ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনিষ্ট কামনা করে না,
এমনকি বিজয়ের গৌরবও তার কাছে কিছু নয়,
হত্যায় আবার কিসের গৌরব?

সে বিষণ্ণ হৃদয় নিয়ে যুদ্ধে যায়
যেনো এসেছে প্রিয়জনের জানাযায়।


০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৯

রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯

পদ্য - ৩০

যারা এই মহান পথ অনুসরণ করে তারা কখনো বল প্রয়োগে বিশ্বাসী নয়।
এভাবে তারা মানুষদের অনুসারী হতে বাধ্য করে না।
এমনকি শত্রুদের প্রতিও বল প্রয়োগ করে না।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
শত্রুর প্রতি বর্বরতা, যদি ভালোর জন্যও করা হয়,
অবশ্যই তা আবার নিজের কাছেই ফিরে আসবে।

জ্ঞানী তার কাজ সম্পন্ন করে তবে থামেন।
বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে তার পরিষ্কার ধারণা রয়েছে,
তিনি জানেন একে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
আর এ ধরণের প্রচেষ্টা এ মহান পথের উল্টো পথে।
সে নিজেকে বিশ্বাস করে,
অন্যদের বিশ্বাস করাতে যায় না,
কারণ সে নিজের প্রতি সন্তুষ্ট।
এজন্য তার অন্যদের অনুমোদন লাগেনা,
কারণ সে নিজেকে ফেলনা ভাবে না।
তাই সমস্ত দুনিয়া তাকে গ্রহণ করে।


০২ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৯

পদ্য - ২৯

তুমি কি সবাইকে শ্রেষ্ঠ করতে চাও?
মনে হয় না এটা সম্ভব।

এ জগৎ পবিত্র।
একে আর পবিত্র করা যাবে না।
যদি জোর করে কার্য সিদ্ধি করতে চাও, তবে বিফল হবে।
যদি সকলকে হাতের পুতুল ভাবো, তবে তা হারাবে।

সময় এখন এগিয়ে যাবার,
সময় এখন পিছিয়ে পড়ার,
সময় এখন চঞ্চলতার,
সময় এখন জিরিয়ে নেবার,
সময় এখন শক্তিমত্তার,
সময় এখন দূরে সরবার,
সময় এখন নিরাপদে থাকার,
সময় এখন বিপদে পড়ার।

জ্ঞানী সবই দেখেন তাদের মত করে,
কিন্তু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন না।
সে তাদের নিজেদের পথে যেতে দেন।
এজন্যই তিনি সবার মাঝেই বিরাজ করেন।


০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:১৭

পদ্য - ২৮

কঠোরতার সাথে কোমলতা মেশাও।
উজ্জ্বলতার সাথে রাখো নিষ্প্রভতা।
মহানুভবতার সাথে রাখো নীচতা।
তবেই তোমার সাথে থাকবে সমস্ত দুনিয়া।
যখন জগৎ তোমার সাথে থাকবে
মহান পথে কখনই পথ হারাবে না,
তুমি থাকবে সদ্য জন্মানো শিশুর মত।

সাদাকে জানতে হলে
সাথে রাখতে হবে কালো:
জগতের ধাঁচই এটা।
যদি জগতের এই ধাঁচ বুঝতে পারো,
তোমার মনের পথ আরো প্রশস্থ হবে
আর তোমার অসাধ্য কিছুই থাকবে না।

নিজেকে জানতে হলে
অন্যদেরও জানতে হবে,
মেনে নিতে হবে জগতকে সে যেমন আছে।
যদি তাই পারো,
এই মহান পথ তোমার ভেতরকে আলোকিত করবে
তুমি খুঁজে পাবে তোমার আদি সত্তা।

জগৎ তৈরী হয়েছে শূন্যতা দিয়ে,
কাঠের টুকরা দিয়ে যেমন তৈরী হয় ব্যবহারের জিনিস।
জ্ঞানী মন সম্বন্ধে ভাল ধারণা রাখেন
তাই তিনি ব্যবহার করতে পারেন সমস্ত উপকরণ।


২৮ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:৫৮

পদ্য - ২৭

প্রকৃত ভ্রমণপিপাসুর ভ্রমণে নেই পরিকল্পনা,
থাকেনা ফিরে আসার তাড়া,
প্রকৃত শিল্পী গুরুত্ব দেয় তার জ্ঞানকে
যা পূরণ করে তার হৃদয়ের চাওয়া।
প্রকৃত বিজ্ঞান সাধকের হৃদয় হয় উন্মুক্ত
সে গ্রহণ করে সকল মতবাদ,যা স্বীকৃত পরীক্ষায় প্রাপ্ত।

জ্ঞানীর মনও এই পথেই চলে।
কাউকে ঘৃণা না করে তাই ভালবাসা ঢালে।
সকল পরিস্থিতিই সে করতে পারে ব্যবহার,
ক্ষুদ্র সময়ও না করে পরিহার।
একেই বলে আলোয় আলোকিত করা।

"ভাল মানুষ কিন্তু খারাপের চেয়ে খারাপ", মানে কী?
"খারাপ মানুষ কিন্তু ভালোর চেয়ে ভালো", মানে কী?
যদি না বুঝে থাকো তো তোমার ব্যর্থতা, আরো ভাবো
একে বলা হয় "মহান বিস্ময়", "সকল সত্যের হৃদয়"।






২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৩০

সম্পূর্ন বই ডাউনলোড করতে..

তাও তে চিং (মহান পথ..), চীনের প্রসিদ্ধ ধর্ম তাওবাদ-ধর্ম কিংবা তাওবাদ দর্শনের সূচনা এখান থেকেই। বইয়ের মূল লেখক হিসেবে ধারণা করা হয় লাওজি/লাও...